ছবির ক্যাপশন: সোনার ডিম দেওয়া “চকরিয়া জমজম হাসপাতাল: ও দু পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের দৃশ্য।
এম আর মাহমুদ :::
লেখাটি এক লোভী কৃষকের গল্প দিয়েই শুরু করতে হয়েছে। ছাত্র জীবনে গল্পটি পড়েছিলাম, কোন এক গ্রামের এক ভাগ্যবান কৃষকের একটি হাঁস ছিল। হাঁসটি প্রতিদিন একটি করে স্বর্ণের ডিম দিত। ওই ডিম বিক্রি করে কৃষকের পরিবার সুন্দরভাবে চলে আসছিল। হঠাৎ একদিন ওই কৃষকের মাথায় আসল হাঁসটি জবাই করে পেটে থাকা সব ডিম একসাথে সংগ্রহ করে বিক্রি করলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাবে। প্রতিদিনের অপেক্ষায় বসে থাকা ঠিক হবে না। এভাবেই লোভী কৃষক হাঁসটি জবাই করে পেটের ডিম বের করতে গিয়ে কিছুই পেলনা। পরে চরমভাবে হতাশ হয়ে ওই কৃষক অনুতপ্ত হয়ে বলছিল অতিলোভের কারণে সবই শেষ হল।
গল্পটি অবতারণার কারণ-চকরিয়া পৌরসদরে প্রতিষ্ঠিত জমজম হাসপাতাল পরিচালনা নিয়ে দুই গ্র“পের আস্তিন গুটাগুটি, হাকডাক ও কাদা ছোঁড়াছুড়ি দেখে মনে হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি তিঁলে তিঁলে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
চকরিয়াবাসী একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের এমন অপমৃত্যু কামনা করেনা। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকালে প্রথম ৫০ জন ও পরবর্তীতে নেওয়া ২৫ জনসহ মোট ৭৫ জন অংশিদার নিয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৭ সালে। এরপর থেকে বেসরকারী এই হাসপাতালটি ৬০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা সদরের জন্যে মানসম্মত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ হাসপাতালে বহু বরেণ্য ব্যক্তি অংশিদার হিসেবে রয়েছেন। যেমন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. অধ্যাপক মাহবুব কামাল, ডা. শওকত উসমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক মনজু, চউক এর প্রকৌশলী নুরুল হোছাইন, ডা. আব্বাস উদ্দিন, এডভোকেট উসমান আলী, এডভোকেট নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক রিদুয়ানুল হক, সাবেক শিবির নেতা আকতার আহমদ, গোলাম কবির, সাবেক চেয়ারম্যান জাবের আহমদ চৌধুরী, চকরিয়া কলেজের সাবেক জিএস রিয়াজ মোহাম্মদ রফিক ছিদ্দিকী ও সাংবাদিক জি এম আশেক উল্লাহসহ সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে গুনীজন। তাদের শ্রম ও মেধায় জমজম হাসপাতালের এ অগ্রযাত্রা অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে করা যায় না।
এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সেবার কারণে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও বান্দরবানের লামা-আলীকদমের শত শত রোগী স্বল্প খরচে সুচিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি না থাকলে এসব রোগীদের কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হতো। এতে বিপণœ রোগীদের ব্যয় যেমন বাড়ত তেমনি ভোগান্তির শিকার হতে হতো বেশী। হাসপাতালটি যতই সুপরিচিত ও সেবার মান বাড়ছে তেমনি আয়ের পরিমানও হু হু করে বাড়ছে। ফলে পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছে বলে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা বলছে অতীতের পরিচালকেরা হাসপাতালের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আর যারা ক্ষমতায় নেই তারা বলছে এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারাই শেয়ার হোল্ডারদের অর্থ লোপাট করে খাচ্ছে। দু পক্ষের অভিযোগ প্রসঙ্গে অনেক নিরীহ শেয়ার হোল্ডারের অভিমত ‘এক বুড়ি আরেক বুড়িকে নানী শ^াশুড়ী বলে ডাকছে।’
দু পক্ষের মারমুখী আচরণের কারণে সেবামুলক প্রতিষ্ঠানটি যে কোন মুহূর্তে অচল হয়ে পড়ার আশংকা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
প্রশাসনের নজরদারীর কারণে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে না। দুপক্ষই হোটেলে খ্যাত-অখ্যাত সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করেছে। মূলতঃ স্বাস্থ্যসেবার নামে জামায়াত ইসলামী সমর্থিত ও সমমনা লোকজন নিয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকালে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। এ কারণে আশানুরুপ অগ্রসর হয়েছে জমজম হাসপাতালটি। স্থানীয় লোকজনের অভিমত প্রতিষ্ঠাকালের সেই মহৎ উদ্দেশ্য হয়তো এখন নেই বলে এ নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ওই সংগঠনের দায়িত্বশীল পরিচালকেরা কি ভুলে গেছে সেই শ্লোগানটি ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’।
এ লেখাটি তৈরির পেছনে কারো ইন্ধন নেই। জমজম হাসপাতালের একজন টাকা দিয়ে সেবা গ্রহণকারী হিসেবে বিনয়ের সাথে দুপক্ষের কাছে করজোড়ে মিনতি করছি আপনাদের লাগামহীন আচার-আচরণ, কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি ও সংঘাতপূর্ণ মানসিকতা ত্যাগ করে সোনার ডিম পাড়া হাঁসটি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন। এই লেখার কারণে কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কথায় আছে সাদা ভাত নষ্ট হলে ধুঁয়ে পানতা ভাত খাওয়া যায়। কিন্তু বিরানী নষ্ট হলে ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায়ান্তর থাকেনা।
মাহমুদুর রহমান মাহমুদ
সভাপতি, চকরিয়া অনলাইন প্রেস ক্লাব ।
পাঠকের মতামত: